জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে হলের একাধিক ছাত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা। তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

নির্যাতনে শিকার ওই ছাত্রী চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীর তার নাম হাফসা বিনতে নূর। এ ঘটনার পর বুধবার (১৭ মে) হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার এর মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিজেদের রুমে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাফসা বিনতে নূরের সঙ্গে জুনিয়র রুমমেট রেবেকা খাতুনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এ পর্যায়ে রেবেকা খাতুন হলের অন্য রুমের মেয়েদের নিয়ে এসে রুম আটকে হাফসাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন ও হেনস্তা করে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে হেনস্তার পর হাফসা বিনতে নূর অজ্ঞান হয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সময়ে ছাত্রলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বাজে আচরণ করা হয়। এমনকি মিছিল মিটিংয়ে না গেলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুনতে হয় তাদের। এমনকি সিনিয়রদের সঙ্গে একের পর এক বেয়াদবি করেই যাচ্ছে তারা। এমনকি রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেয়া হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী জানান, গতকালের ঘটনা দেখে আমি এসে হাফসাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু রেবেকা, নিনজা, ফাল্গুনীসহ সকলে তাকে ঘেরাও করে রাখে। একপর্যায়ে সে মোবাইল নিতে গেলেও তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইল আনতে দেয়নি তারা।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী হাফসা বলেন, এটা আমাদের রুমের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। কিন্তু আমাদের দুই ব্যাচ জুনিয়র বোটানি বিভাগের রেবেকা খাতুন  হলের অন্য রুমের ৭ /৮ জন মেয়েকে নিয়ে আমাদের রুমে এসে আমাকে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। তারা সকলে মিলে রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমার উপর নিপীড়ন চালায়। নিনজা শিকদার নামে এক মেয়ে এ পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

অভিযুক্ত নাজমুন নাহার স্বর্ণা মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি ম্যামকে সঙ্গে নিয়ে ওদের রুমে যাই। আমি গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু হাফসা আপুকে মারধরের বিষয় আমি কিছু জানি না। একপর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে খাবার খেতে নিচে চলে আসি, অভিযোগকারী ঐ মেয়েকে আটকে রেখে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। সাধারণ সম্পাদক এস এম আক্তার হোসাইনকে বার বার কল দিলেও কল কেটে দেওয়ায় যোগাযোগ সম্ভব হয় নি।

পরবর্তীতে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,” এ রকম কোনো বিষয়ে ঘটেছে, তা তো জানি না। এ বিষয়ে কেউ তো কিছু বললো না। ম্যাম এর কাছে অভিযোগ গেছে, ম্যাম ও তো কিছু জানায় নাই। আমি এ বিষয়ে একবারেই অবগত নই।”

ঘটনার সময় ওখানে উপস্থিত হলের আবাসিক শিক্ষক মানসুরা বেগম বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে এ কলহের সূত্রপাত। বিষয়টি জেনে দ্রুত আমি সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও তারা আক্রমণাত্মক ছিল। হাফসাকে তারা রুমের বাইরে যেতে ও ফোনটাও ধরতে দিচ্ছিল না।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, হলে ছোটখাটো একটু ঘটনা ঘটেছিল সেটা আজ সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার ( ১৭ মে) অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। তারপর দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে যদি কেউ হলে বিশৃঙ্খলা করে তাহলে তাদের সিট বাতিল করা হবে।  এ বিষয়ে উপাচার্যকে অবহিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতেও কয়েকজন ছাত্রলীগ নারী কর্মীর হাতে মারধরের শিকার হন আদরী ও শাহনাজ নামে দুই শিক্ষার্থী। এমনকি তাদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।